Posted in Uncategorized

শুন্য|| হুমায়ূন আহমেদ

কোথায় যেন পড়েছিলাম,

“শূন্য কি! সে কি? শুরু না শেষ!

শূন্য দিয়েই শুরু করি
শূন্য দিয়েই সংখ্যা গোনা ;
শূন্যে গিয়ে মেলায় শেষে
জীবন শেষের সব যাতনা ।।”

স্কুল জীবনে অংক আমাকে বেশ জ্বালিয়েছে। না আমি একদম আজবোজ-ও ছিলাম না, কিন্তু তবুও গণিত ছিল বিষপিঁপড়ে! ক্লাস নাইন-টেনে আমাদের অংক গুরু ছিলেন শ্রদ্ধেয় ভুঁইয়া স্যার। তো একদিন স্যার প্রাইম সংখ্যা বোঝাচ্ছিলেন। বোঝাতে গিয়েই এলো ফিবোনাচ্চি সিরিজের কথা। স্যার-ই আমাদের “শূন্য ” বইটি পড়ার জন্য পরামর্শ দিলেন। স্যার বলেছে বলে কথা, আমি খুবই গুরুত্ব দিয়েছিলাম। কার থেকে নিয়েছি মনে নেই, কিন্তু এখনো মনে আছে, পড়া পরবর্তী অদ্ভুত সেই অনুভূতি! 

আমার পড়া এটাই ছিলো প্রথম হুমায়ূন স্যারের সাই-ফাই। কিন্তু আমি একে একদম সাই-ফাই জানরা তেও ফেলতে পারছি না। তবে আমি বলবো “শূন্য” হলো সাই-ফাই ফ্যান্টাসি! শুরুতেই বলেছি অদ্ভুত অনুভূতির ব্যাপারটা। বাস্তবতা কি সত্যি বাস্তব? নাকি কল্পনার সবকিছুই মেকি? নাকি আমাদের কল্পনাগুলো আমাদের মনের গহীনে লুক্কায়িত থাকা একান্ত অভিলাষ? এ বইটিতে লেখক যুক্তি দিয়ে কল্পনাকে পরাস্ত করতে চেয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজেই “ভূমিকা ” অংশে উল্লেখ করেছেন,

” আমি শ্রদ্ধা করি — যুক্তি, কিন্তু ভালবাসি– কল্পনা। আর এটা তো জাগতিক সত্য ভালবাসার এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দে ভালবাসাই জয়ী হয়।” .

দ্বিতীয় জগতের অস্তিত্ব থাকুক বা না থাকুক, “শূন্য ” স্যারের অন্যতম অনবদ্য এক রচনা। শুন্য সংখ্যাটাই কেমন যেন, রহস্যময়। যার আক্ষরিক অর্থই হলো নবডঙ্কা / nothingness, তথাপি এর মূল্য “কিছু নেই ” বললেও ভুল হবে। লেখকের এই উক্তিটিই দেখোনা,

” আপনি লিখতে পারেননা–
৩ x০=০ বা ৪x০=০
একই সঙ্গে আপনি বলছেন শূন্য একটি প্রতীক, আবার সঙ্গে সঙ্গে শূন্যকে গাণিতিক প্রক্রিয়ায় কাজে লাগাচ্ছেন, তা কি করে হয়?”

তাই তো। স্যার মাত্রই আমাদের ভাবুক করে তুলেন। বইটিতে ভালবাসার অন্য এক রূপ দেখেছিলাম আমি…অজানা-অদৃশ্য বস্তুর প্রতি ভালোবাসা, কিংবা মানুষের প্রতি মানুষের প্রচণ্ড এক মমতা! আর উপন্যাসের শেষ অংশটুকু নিয়ে কী আর বলবো…কীভাবে লিখতেন তিনি? আমার সবচেয়ে প্রিয় অংশটুকু -যা আমাকে কাঁদিয়েছে ঠিকই, কিন্তু স্বপ্ন দেখতেও ভোলায়নি। 

” তিনি দেখছেন অভিমানে রূপার চোখ ভিজে উঠতে শুরু করেছে। তখন তিনি বই ফেলে দিয়ে বললেন– চল যাই ভিজি। রূপা আনন্দে হেসে ফেলল।…ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে গলা মিলিয়ে রূপা হাসছে খিলখিল করে… আহ কি সুন্দর স্মৃতি — কি মধুর স্মৃতি।… এক একবার বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সেই আলোয় দেখছেন জলভেজা আশ্চর্য মায়াবী এক মুখ। “

এত্ত প্রিয় এই বইটি। ধন্যবাদ স্যার, ধন্যবাদ আপনাকে। :’)

সব তারা দিয়ে দিলাম। ❤