Posted in Uncategorized

পরিণীতা|| শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

রেটিং: ★★★/★ [৩.৫]
(অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের জন্য: ★★★★)

লেখনীতে সাবলীলতা, সরল কাহিনী বিন্যাস কিংবা অকস্মাৎ মোড় তার লেখার প্রাণ। নামিক ঘটিরাম সমাজের কারুণিক রূপ তাঁর লেখায় ব্যক্ত হয়েছে অবলীলায়। হ্যাঁ, আমি শরৎ চন্দ্রের কথা বলছি। আজ রিভিউ দিচ্ছি তাঁর রচিত “পরিণীতা” র।

পড়শী থেকে পরিচিতি, অতঃপর প্রণয়।নানান বাধা-বিপত্তির নাটকীয়তার পর অবশেষে সুখে-শান্তিতে বসবাস! এই হলো পরিণীতার পরিনতি! রূপকথার কোন গল্প নয়, বাস্তবতা!

উঠন্তী বয়সে আমি “পরিণীতা” পড়েছিলাম। তখন মিষ্টি আবেগের কাছে রূঢ় বাস্তবতা ধারে কাছেও টিকতে পারেনি। শেখর-ললিতার প্রণয় মনে দোলা দিয়েছিলো সে সময়। ললিতার অনায়াসে শেখরের কাছ থেকে টাকা নেওয়াটা মনে হয়েছে মিষ্টি আবেগ- ভালবাসা! বুঝতেও পারিনি ভালোবাসার মোড়কের অন্তর্লীনে থাকা “পরিণীতা” আসলে তৎকালীন সমাজের -ই প্রতিচ্ছবি। চিরাচরিত অর্থডক্স এবং কিছুটা আধুনিকতার ধর্মীয় আস্ফোটন, পুরুষের ক্ষমতা দেখানোর প্রবণতা, আর সেই অবলা -লাজুক-সতী নারীর চিরায়ত রূপ- এই ছিল তখনকার সমাজ। ( এখন? এখন কি এই ছবি একদম নেই হয়ে গিয়েছে?)

ইংরেজিতে বলে না, “damsel in distress”? প্রথম দর্শনে ললিতাকে তা-ই মনে হবে। দোষ দিয়েও লাভ নেই… তার পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছে নির্ভরশীল হতে।

” অনুমতি না পাইয়া যাইবে এত সাহস তাহার ছিল না”…

উক্তিটি যেমন মন খারাপ করে দেয়, তেমনি মেজাজ-ও। স্বাভাবিক, এসব স্বাভাবিক ছিলো !!! (এখন কি আমরা এ বৃত্ত থেকে বের হতে পেরেছি?)

সংসারের বেড়াজালে আবদ্ধ সে মেয়েটিকে আবার অল্প বয়সেই পরিপক্ক হয়ে উঠতে হয়! কিন্তু ছেলেদের বেলায় তা না হলেও চলবে। শেখরকই দেখো না। এক অপরিপক্ক, ভীরু ও কাপুরুষ। নারী মাত্রই সম্পত্তি নয়, সম্পদ -যে বলা মাত্র তাকে হস্তান্তর বা ছুঁড়ে ফেলা যায় না- কথাটি “শিক্ষিত -ভদ্র” শেখরের বোধহয় জানা ছিলো না। এ কথা বলছি না, সে ললিতাকে ভালবাসেনি! বেসেছে, কিন্তু… হ্যাঁ, এর মাঝেও কিন্তু আছে! ভালবাসার মাঝে কিন্তু আসাটাই কিন্তু খটমটে, তাই না?

অন্যান্য চরিত্রগুলোর মাঝে আমার গিরীন-কে বেশ ভালো লেগেছে…কেন জানি, ভালো লাগা চরিত্রগুলো প্রায় বেচারা উপাধি পায়! গিরীন বাবু-ও ওই বেচারাদের দলে।

পরিণীতা অর্থ হলো বিবাহিত। ললিতা জানত সে শেখরের পরিণীতা! এর জন্য কেবল ওই একটি ফুলের মালা কিংবা মৃদু ভালোবাসার স্পর্শই যথেষ্ট! শেখর যদি আজীবন তাকে গ্রহণ না করতো তবে এভাবেই সে চিরকাল কাটিয়ে দিত… এ কি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ নাকি নেহাৎ অন্ধবিশ্বাস ??

বইটি পড়ে মনে হবে ললিতা সবার আরাধ্য। খুব চিন্তা সবার এই মেয়েটির জন্য। কিন্তু একটিবারও তো কেউ মেয়েটিকে তার অভিলাষ জিজ্ঞেস করেনি। প্রয়োজনবোধ হয়নি। ললিতাও কোন রা করে নি। কেননা সেটাই স্বাভাবিক। যদ্যপি, ললিতা তার মননে, তার ভালোবাসায়, তার বিশ্বাসে অটল ছিল!

আমার যা মনে হয়েছে, শরৎ চন্দ্র এখানে আদর্শ নারীর ভালবাসার উপর দৃষ্টিপাত করেননি, বরং অঙ্গুলী নির্দেশ করেছেন এর উপর – যে মেয়েরা কোনকালেই অবলা ছিলো না, কেবল প্রকৃত শিক্ষা আর সুযোগের অপ্রাতুলতা আর তথাকথিত সমাজের অধীনতা তাকে অবর করে রেখেছে! এছাড়া সামাজিক শ্রেণিবৈষম্যের কথা আর নাই বা বললাম। আর রয়েছে মেয়েদের লাজুকতা! মেয়েরা জানো তো, লাজুকতা ভদ্রতার অংশ- তার মানে এই নয় যে, এই অংশ তোমার দুর্বলতা!

যাহোক, রোমান্টিক নভেলে এসব বাস্তবতা অরব! রোমান্সের জন্য বলো অথবা সে প্রাক ১৯০০ হায়নের সমাজ কেমন ছিলো বলো কিংবা লেখনীর প্রাঞ্জলতার জন্য বলো – পড়ে ফেলো পরিণীতা!

শেষ কথা হলো, আজ নারী মুক্ত হোক বা না হোক, তারা সবাই জানে কীভাবে মুক্ত হতে হয়, যখন তোমার জানার পথ উন্মুক্ত, তখন তোমাকে গাইতে হবে না,

“ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে…”♪♪

বরং হেড়ে গলায় ডাক ছাড়ো,

“যদি কেউ কথা না কয়, 
ওরে… ওরে ও অভাগা,
যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয়—
তবে পরান খুলে
ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা 
একলা বলো রে॥”♪♪

হ্যাপি রিডিং~♥

Posted in Uncategorized

Review~

বৃষ্টির ঠিকানা || মুহম্মদ জাফর ইকবাল

জাফর ইকবাল স্যারের বইগুলোতে দেশ -দেশ আর মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারটা থাকবেই থাকবে। বেশ গর্ব করার মতো, তাই না? “বৃষ্টির ঠিকানা” বইটি এর ব্যতিক্রম নয় ঠিকই কিন্তু অন্য রকম এক অনুভূতি হবে তোমাদের বইটি পড়ে!

কতই না মমতা মাখানো, প্রথম যেদিন পড়েছিলাম সেদিনও আমি কেঁদেকেটে একাকার! আজও কেঁদেছি বটে, কিন্তু আরও একটি কারণে! যে আমার থেকে বইটি ধার নিয়েছিলো…সে আর কোনোদিন ধরা দেয়নি! সেও গায়েব…আমার বই-ও গায়েব। পাওয়ার আশায় আমারও আর কেনা হয়ে ওঠেনি, আমি কী খারাপ! 😥

যাহোক, পুরনো কাসুন্দি বাদ। বইয়ের কথায় আসি। মূলতঃ বইটি তেরো বছরের কিশোরী টুম্পা এবং তার স্কিটজফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত বাবার মধুর এক গল্প।

টুম্পা বেড়ে উঠেছে আমেরিকায় তার মার সাথে। কিশোরী মেয়েটি ঠিকই বুঝতে পারে তার বিপিতার অনীহার দৃষ্টি। এরকম বাবা (বাবা নয়…লোক বলি) বাস্তবে একদম যে নেই তা নয়…কিন্তু এরা ভীষণ ভীরু! ভীরু বলেই নিজ পরিবার কিংবা দেশের বিরুদ্ধে যেতে এক সেকেন্ড-ও কার্পণ্য করেনা!

টুম্পা, এই এতটুকুন একটা মেয়ে, বাংলাদেশকে নিয়ে কতটা চিন্তা করলে শুধুমাত্র একটা গান থেকে যশোর রোডের সেই হৃদয়বিদারক করুণ দৃশ্য রঙ তুলির আঁচড়ে এঁকে ফেলতে পারে! যদিও ছবি আঁকা তার রক্তে! দেশ আমরা সবাই ভালোবাসি সত্যি..কিন্তু ক’জনইবা চিন্তা করি, কেন এত সুন্দর এ দেশের সবকিছু? কেন এত আত্মত্যাগ এ দেশের জন্য। টুম্পা কিন্তু ভেবেছে। তো সেই দেশ যার মননে, সে তো আর আমেরিকায় পড়ে থাকতে পারে না..তোমরা উইনিং ব্যান্ড-এর ওই গানটা শুনেছ? ঐ যে ওইটা, “প্রিয় ঠিকানা”?

‘শহর জড়ানো বৃষ্টির চাদরে
তবু ব্যস্ত মানুষ কত দিকে যায়
মনের খাতায় আজ অনেক স্মৃতি
কেমন ছিলাম আমি আজ কোথায়../পরিচিত মুখেরা প্রতিটি হৃদয়
বারবার ডাকে সেই প্রিয় ঠিকানা”♪♪♪

টুম্পার কাছে প্রিয় সেই ঠিকানা নিশ্চয়ই দূরপরদেশ আমেরিকা নয়। বৃষ্টির আকর্ষণে কিংবা দেশের টানে টুম্পা তো চলে এলো বাংলাদেশে। এরপরই কিন্তু কাহিনীর মোড় ঘুরে গেলো। কেন? কী হলো…? আগেই বলেছি বইটি এক বাবা-মেয়ের আখ্যান। তাই, কিছুটা আঁচ হয়তো করতে পারছো। কিন্তু আমি যদি বলতে থাকি এ কাহিনী জীবনেও শেষ হবে না 😅

সেদিকে আর গেলাম না তাই। বরঞ্চ বলি, কেন আমার বইটি এত্ত প্রিয়। প্রথমত, আমি বৃষ্টি খুব পছন্দ করি। বৃষ্টি এলো আর আমি মনমরা হয়ে চুপটি করে থাকব? -কক্ষনো না! Rain is like my jubilation! জাফর স্যার তো বলেই দিয়েছেন, তারাই বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসে যাদের
“…মনে অনেক আনন্দ। ” অন্তত আমার জন্য তো অবশ্যই। এই বইটিতে স্যার কী চমৎকার ভাবেই না বৃষ্টির সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন…” এতো সুন্দর তাকে কী ভাল না বেসে পারা যায়?”

দ্বিতীয় কারণ, ক্রিস্টিনা হেনরিকসন, অসাধারণ একজন শিক্ষিকা! শিক্ষকতা, যা আমার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ! এমন একজন টিচার হলে আর কী কিছু লাগে বলো?

তৃতীয়ত, এই বইটি আমাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে, ভালোবাসতে শিখিয়েছে, ভাবতে শিখিয়েছে…শিখিয়েছে যে কোনো কিছুকে অন্য ভাবে দেখতে। এখানে বাংলাদেশের এমন এক রূপ তুলে ধরা হয়েছে, পড়ে তুমি বলবে, আমাদের অনেক ভুলত্রুটি আছে ঠিকই তবুও আমরা আর পিছিয়ে নেই এবং বিশ্বের কাছেও তা আর অজানা নয়।

টুম্পার মতো আমিও ভাবতাম আমার দেশের নাম ঠিক মতো কেন উচ্চারণ করতে পারেনা যারা অন্য ভাষায় কথা বলে! যারা ধ্বনিবিজ্ঞান/phonetics বিষয়ে অবগত আছো, তারা জানো, ইংরেজি ধ্বনিতে কিছু কিছু বাংলা ধ্বনি নেই আর গুগল কিংবা ইংরেজি অভিধানে বাংলাদেশ নামটি আছেই এভাবে 
/ˌbæŋɡləˈdɛʃ/ ( ব্যাংলাডেশ)। ওরা তো বাংলা পড়তে পারে না, phonetics দেখে ওরা এভাবেই উচ্চারণ করতে বাধ্য হয়। 
[ বি.দ্র. গুগলে এখন / ˌbɑːŋ-/ (বাং) সংযুক্ত হয়েছে যদিও কিন্তু দ/ড এর কোনো পরিবর্তন ঘটেনি ]

পরিশেষে এই বইটি আমাকে একটি অসাধারণ গান আর একটি অসাধারণ কবিতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। মৌসুমি ভৌমিকের “যশোর রোড ” আর 
Allen Ginsberg’s “September on Jessore Road”! গান এবং কবিতা দুটি-ই অনেক বড়। এত্ত মন খারাপ করিয়ে দেয়.. গানের কিছু অংশ উল্লেখ করছি.. প্লিজ শুনে দেখো~

“শত শত চোখ আকাশটা দেখে
শত শত শত মানুষের দল
যশোর রোডের দু-ধারে বসত
বাঁশের ছাউনি, কাদামাটি জল।
কাদামাটি মাখা মানুষের দল
গাদাগাদি হয়ে আকাশটা দেখে
আকাশে বসত মরা ঈশ্বর
নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে?
ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে
যুদ্ধে ছিন্ন ঘর-বাড়ী-দেশ
মাথার ভিতর বোমারু বিমান
এই কালো রাত কবে হবে শেষ।
শত শত মুখ হায় একাত্তুর
যশোর রোড যে কত কথা বলে♪”

মন খারাপ করিয়ে দিলাম, তাই না? কিন্তু “বৃষ্টির ঠিকানা” পড়ে মন ভালো হতে বাধ্য! তাই দেরি করো না, ঠিক আছে? পড়ে ফেলো শীঘ্রই।

Happy Reading~ ❤

Posted in Uncategorized

ওজের জাদুকর | লিম্যান ফ্র‍্যান্ক বোম( অনুবাদ করেছেন : শহীদ আখন্দ)

Home is where my heart is and my brain agrees courageously!! .

আম্মু বলে, বুড়ো বয়সে পিচ্চিদের বই!…ছোটদের গিফট করে দাও! আমি আম্মুকে বলি, আমার বুড়ো হতে কিন্তু একদম কোন সমস্যা নেই, কিন্তু “ভেল্কিরাম ভূতের ছানা” র মতো মনটি থাকা চাই কচি কচি! হিহি! তো এই যখন খায়েস..বই মেলায় দেখা মাত্র নিয়ে নিয়েছি “ওজের জাদুকর”- কচি দের বইখানা! .

ওজের জাদুকর-কে তো সবাই চেন! আমার না ওজ কে তিন গোয়েন্দার “ছিনতাই “-এর কারলো ক্যাসাডোর মতো মনে হয়, ক্যাসাডো তো লিচু-চোর ছিলো না তবু ” পড়বি পড় মালির (জিভারোদের) ঘাড়েই..” পড়েছিলো আর তাতেই হয়ে গেলো “কালুম-কালুম”- পবন দেবতা! আর বুড়ো-টেকো মাথার ওজ বেচারা হয়ে গেলো বিরাট জাদুকর! কী আর করা, ক্যাসাডো কে বাঁচালো তিন গোয়েন্দার দল..আর ওজ রক্ষে পেলো ডরোথির দলের কল্যাণে! 

ওজের অনুবাদ পূর্বেও পড়েছিলাম… অনীশ দাস অপুর! আজ আবার পড়লাম। প্রথমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির অনুবাদ করেছেন শহীদ আখন্দ। পড়ে বেশ মজা পেয়েছি আমি! পিচ্চিদের বই বলে কথা! আর চমৎকার প্রচ্ছদ তো দেখতেই পারছো! সংগ্রহে থাকলো ~♥

Posted in Uncategorized

শুন্য|| হুমায়ূন আহমেদ

কোথায় যেন পড়েছিলাম,

“শূন্য কি! সে কি? শুরু না শেষ!

শূন্য দিয়েই শুরু করি
শূন্য দিয়েই সংখ্যা গোনা ;
শূন্যে গিয়ে মেলায় শেষে
জীবন শেষের সব যাতনা ।।”

স্কুল জীবনে অংক আমাকে বেশ জ্বালিয়েছে। না আমি একদম আজবোজ-ও ছিলাম না, কিন্তু তবুও গণিত ছিল বিষপিঁপড়ে! ক্লাস নাইন-টেনে আমাদের অংক গুরু ছিলেন শ্রদ্ধেয় ভুঁইয়া স্যার। তো একদিন স্যার প্রাইম সংখ্যা বোঝাচ্ছিলেন। বোঝাতে গিয়েই এলো ফিবোনাচ্চি সিরিজের কথা। স্যার-ই আমাদের “শূন্য ” বইটি পড়ার জন্য পরামর্শ দিলেন। স্যার বলেছে বলে কথা, আমি খুবই গুরুত্ব দিয়েছিলাম। কার থেকে নিয়েছি মনে নেই, কিন্তু এখনো মনে আছে, পড়া পরবর্তী অদ্ভুত সেই অনুভূতি! 

আমার পড়া এটাই ছিলো প্রথম হুমায়ূন স্যারের সাই-ফাই। কিন্তু আমি একে একদম সাই-ফাই জানরা তেও ফেলতে পারছি না। তবে আমি বলবো “শূন্য” হলো সাই-ফাই ফ্যান্টাসি! শুরুতেই বলেছি অদ্ভুত অনুভূতির ব্যাপারটা। বাস্তবতা কি সত্যি বাস্তব? নাকি কল্পনার সবকিছুই মেকি? নাকি আমাদের কল্পনাগুলো আমাদের মনের গহীনে লুক্কায়িত থাকা একান্ত অভিলাষ? এ বইটিতে লেখক যুক্তি দিয়ে কল্পনাকে পরাস্ত করতে চেয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজেই “ভূমিকা ” অংশে উল্লেখ করেছেন,

” আমি শ্রদ্ধা করি — যুক্তি, কিন্তু ভালবাসি– কল্পনা। আর এটা তো জাগতিক সত্য ভালবাসার এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দে ভালবাসাই জয়ী হয়।” .

দ্বিতীয় জগতের অস্তিত্ব থাকুক বা না থাকুক, “শূন্য ” স্যারের অন্যতম অনবদ্য এক রচনা। শুন্য সংখ্যাটাই কেমন যেন, রহস্যময়। যার আক্ষরিক অর্থই হলো নবডঙ্কা / nothingness, তথাপি এর মূল্য “কিছু নেই ” বললেও ভুল হবে। লেখকের এই উক্তিটিই দেখোনা,

” আপনি লিখতে পারেননা–
৩ x০=০ বা ৪x০=০
একই সঙ্গে আপনি বলছেন শূন্য একটি প্রতীক, আবার সঙ্গে সঙ্গে শূন্যকে গাণিতিক প্রক্রিয়ায় কাজে লাগাচ্ছেন, তা কি করে হয়?”

তাই তো। স্যার মাত্রই আমাদের ভাবুক করে তুলেন। বইটিতে ভালবাসার অন্য এক রূপ দেখেছিলাম আমি…অজানা-অদৃশ্য বস্তুর প্রতি ভালোবাসা, কিংবা মানুষের প্রতি মানুষের প্রচণ্ড এক মমতা! আর উপন্যাসের শেষ অংশটুকু নিয়ে কী আর বলবো…কীভাবে লিখতেন তিনি? আমার সবচেয়ে প্রিয় অংশটুকু -যা আমাকে কাঁদিয়েছে ঠিকই, কিন্তু স্বপ্ন দেখতেও ভোলায়নি। 

” তিনি দেখছেন অভিমানে রূপার চোখ ভিজে উঠতে শুরু করেছে। তখন তিনি বই ফেলে দিয়ে বললেন– চল যাই ভিজি। রূপা আনন্দে হেসে ফেলল।…ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে গলা মিলিয়ে রূপা হাসছে খিলখিল করে… আহ কি সুন্দর স্মৃতি — কি মধুর স্মৃতি।… এক একবার বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সেই আলোয় দেখছেন জলভেজা আশ্চর্য মায়াবী এক মুখ। “

এত্ত প্রিয় এই বইটি। ধন্যবাদ স্যার, ধন্যবাদ আপনাকে। :’)

সব তারা দিয়ে দিলাম। ❤